হুজ্জাতুল ইসলাম মাওলানা মুহাম্মদ মুনীর হুসাইন খান
হাওজা নিউজ এজেন্সি রিপোর্ট অনুযায়ী, ইউরোপীয় সাম্রাজ্যবাদীরা ক্লাসিক্যাল স্ট্যান্ডার্ড খাঁটি অবিকৃত আরবী ভাষার ( পবিত্র কুরআনে ব্যবহৃত আরবী ভাষা ) ব্যাপক বিকৃতি সাধন করে বিভিন্ন বিকৃত কথ্য আরবী উপভাষার ( impure colloquial Arabic dialects ) সৃষ্টি ও প্রচলন করে বিভিন্ন আরবদেশে যেমন : মিসরে মিসরী আরবী কথ্য ভাষা , লেবাননে লেবাননী আরবী কথ্য ভাষা ইত্যাদি । এ সম্বন্ধে Roots of the Arabic Language - Hebrew, Amharic, Aramaic & Maltese -- এ প্রবন্ধের নীচের প্যারাগ্রাফে আলোচনা করা হয়েছে :
Once Europe came to be a continent of colonizers and reached the Arab countries, many dialects started to blossom that perhaps wouldn’t have otherwise. This was due to the active discouragement of Classical Arabic use and teaching by European colonizers. With no unifying dialect being taught, this gave all of the local dialects room to grow and develop into the many Arabic dialects we know today. (( অর্থাৎ একদা ইউরোপ সাম্রাজ্যবাদীদের মহাদেশে রূপান্তরিত হয় এবং আরব দেশগুলোয় চলে আসে ,
তখন ( ইউরোপীয় সাম্রাজ্যবাদীদের প্রভাব ও প্রচেষ্টায় ) বহু কথ্য ও আঞ্চলিক আরবী বুলি ও উপভাষার বিকাশ হওয়া শুরু হয় যেগুলোর উৎপত্তি সম্ভবত ( ইউরোপীয় সাম্রাজ্যবাদীরা না এলে ) হত না ; আর এটা ( বিকৃত অপভ্রংশ আঞ্চলিক আরবী বুলি ও উপভাষা সমূহের উৎপত্তি ) ইউরোপীয় সাম্রাজ্যবাদীগণ কর্তৃক ধ্রুপদী আরবী ভাষা ব্যবহার ও শিক্ষার বিষয় কার্যকর ভাবে নিরুৎসাহিত করার কারণেই হয়েছে। ঐক্য আনয়নকারী / একতাবদ্ধকারী কোন উপভাষা শিক্ষা দান না করা সহ এ বিষয়টি ( ইউরোপীয় সাম্রাজ্যবাদী গণ কর্তৃক ধ্রুপদী শুদ্ধ খাঁটি স্ট্যান্ডার্ভ আরবী ভাষা ব্যবহার ও শিক্ষা দানে নিরুৎসাহ প্রদান ) আঞ্চলিক আরবী কথ্য ভাষা সমূহের বিকাশ এবং সেগুলো আমাদের জানা আজকের আরবী উপভাষা ও বুলি সমূহে রূপান্তরিত হওয়ার ক্ষেত্র প্রস্তুত করে । ))
আরব দেশগুলোতে এ ভাবে ইউরোপীয় সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলো আরবী ভাষার বিরুদ্ধে কাজ করেছে । এটা দিব্য স্পষ্ট যে সেক্যুলার ধর্মহীন ধর্ম বিরোধী বস্তুবাদী ইউরোপীয় সাম্রাজ্যবাদী শক্তিসমূহ ইসলাম , পবিত্র কুরআন, আরবী ভাষা , ইসলামী সংস্কৃতি ও মুসলিম উম্মাহর ভয়ঙ্কর শত্রু। ওরা চায় মুসলিম উম্মাহকে এমনকি আরবদের কেও খাঁটি বিশুদ্ধ ধ্রুপদী আরবী ভাষা ভুলিয়ে দিতে । কারণ মূসলমানরা যদি খাঁটি বিশুদ্ধ আরবী ভুলে যায় এবং তা চর্চা না করে তাহলে তারা পবিত্র কুরআন ও সুন্নাহ আর বুঝতে পারবে না ।
যে কোনো ভাষা সরকারী ও রাষ্ট্রীয় আনুকূল্য পেলে অতি দ্রুত বিকশিত ও বিস্তৃত হয় এবং লিংগুয়া ফ্রাংকায় পরিণত হয় । আপন গতিতে ভাষার প্রসারে দীর্ঘ সময়ের প্রয়োজন হয় । আবার সরকারী বা রাষ্ট্রীয় হস্তক্ষেপে কোন ভাষার মৃত্যু অথবা দ্রুত বিকৃতি সাধনও হতে পারে । যেমন হয়েছে আরবী ভাষার ক্ষেত্রে বিদেশি ইউরোপীয় সাম্রাজ্যবাদী শক্তিসমূহের হস্তক্ষেপে যা উপরিউক্ত প্যারা থেকে স্পষ্ট হয়ে যায় । বাংলা ভাষা অষ্টাদশ ও ঊনবিংশ শতকের প্রথম অর্ধ ভাগ পর্যন্ত ছিল আরবী ফারসী শব্দ বহুল ও সরল ভাষা । কিন্তু কোলকাতায় ইংরেজরা ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ প্রতিষ্ঠা করে সেখানে বাংলার ভাষার আমূল পরিবর্তন ও বিকৃতি সাধন করে আরবী ফারসী শব্দ ঝেঁটিয়ে দূর করে সংস্কৃত শব্দ বাহুল্যের কৃত্রিম বাংলা ভাষার প্রবর্তন করে উনিশ শতকের শুরুতে যা আজ আমাদের সাহিত্য ও শিক্ষার মাধ্যম । আর ইংরেজরা প্রচার করত যে বাংলা সংস্কৃত জননীর সন্তান । মুসলমান শাসকরা নাকি জোর করে বাংলা ভাষায় আরবী ফার্সী শব্দের অনুপ্রবেশ ঘটিয়ে এ ভাষার বিশুদ্ধতা নষ্ট করেছে। তাই বঙ্গ ভাষাকে তার মাতৃ জননী সংস্কৃতের ক্রোড়ে ফিরে যেতে হবে এবং আরবী ফার্সী শব্দ বাদ দিয়ে সংস্কৃত শব্দ গ্রহণ করে শুদ্ধ হতে হবে । ইংরেজদের প্রবর্তিত এ রীতি অনুযায়ী আজও বাংলা ভাষায় আরবী ফারসী শব্দের প্রয়োগ ও ব্যবহার অশুদ্ধ রীতি এবং দাঁত ভাঙ্গা কঠিন দুর্বোধ্য তৎসম সংস্কৃত শব্দ প্রয়োগ ও ব্যবহার শুদ্ধ রীতি বলে গণ্য । তাই বাংলা ভাষায় আরবী ফারসী শব্দ ব্যবহার অবৈজ্ঞানিকতা ,মুর্খতা , অনগ্রসরতা , খ্যাত্ ও সেকেলে হওয়া ( মান্ধাতার আমলে প্রত্যাবর্তন এবং অশিক্ষিত ও বাঙালি সংস্কৃতি বিরোধী
হওয়া ) এবং তৎসম সংস্কৃত শব্দ প্রয়োগ ও ব্যবহার আধুনিক , শিক্ষিত , জ্ঞানী , বিজ্ঞান মনস্ক , সভ্য ও প্রগতিশীল হওয়ার প্রতীক এবং উন্নত রুচি ও সংস্কৃতির পরিচায়ক বলেই গণ্য হয়। আমি যখন প্রথম মিথস্ক্রিয়া , অভিশংসন , প্রণোদনা - এ শব্দগুলো শুনি তখন এ গুলোর অর্থ জানার জন্য আমাকে অভিধান দেখতে হয়েছিল।
উল্লেখ্য যে এ সব শব্দ খাঁটি সংস্কৃত অর্থাৎ তৎসম শব্দ । এ ধরণের বহু উদাহরণ বিদ্যমান ।
আর আমাদের দেশে ইসলাম , মুসলমান ও আরবী ভাষা বিদ্বেষী ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদ আমাদের পাঠ্য পুস্তকে *" আরবী ভাষা অত্যন্ত কঠিন ভাষা *" এ বিষ বাক্যটা ঢুকিয়ে দিয়ে আরবী ভাষার বিরুদ্ধে অপপ্রচার করেছে যার রেশ এখনো বিদ্যমান । ক্লাস থ্রি ফোরের ইংরেজি গ্র্যামার ও অনুবাদের
বইতে এ বাক্য (( Arabic is a very difficult and hard language : আরবী অত্যন্ত কঠিন ভাষা )) - এ ধরণের হাবিজাবি কথা ও বাক্য লিখে অল্প বয়সের শিশু - কিশোর ছাত্র ছাত্রীদের মনে অহেতুক আরবী ভিতি ঢুকিয়ে দিয়েছে যাতে করে যেন জীবনেও তাঁরা আরবী ভাষার ধারের কাছে না ঘেঁষে এবং এ ভাষা না শেখে অর্থাৎ মানসিক ও মনস্তাত্ত্বিক ভাবে এ ভাষার প্রতি তাদের মধ্যে যেন প্রবল বিতৃষ্ণার উদ্ভব হয় এবং তারা যেন আরবীর চাইতে ইংরেজি ভাষাকে অধিক আপন বলে গ্রহণ করে এবং আরবীর চাইতে ইংরেজি ভাষায় যেন অধিক স্বাচ্ছন্দ বোধ করে। আর ইসলামী সংস্কৃতি ও আরবীর বদলে যেন ইংরেজি ভাষা ও সংস্কৃতি এ দেশের মানুষের মধ্যে বিস্তৃতি লাভ করে । তাহলে এ দেশের মানুষ তখন ইসলামী সংস্কৃতি থেকে বেগানা ও অপরিচিত হয়ে ইংরেজি ইউরোপীয় বস্তুবাদী বিধর্মী খ্রিষ্টীয় সংস্কৃতির আপন ও নিকটবর্তী হবে । এত সুকৌশলে ও ধূর্তামির সাথে ইসলামের শত্রু ইংরেজরা এই বাজে ভিত্তিহীন বাক্যটা সেই ঔপনিবেশিক শাসন আমল থেকে পাঠ্য পুস্তকে ঢুকিয়ে দিয়েছে যা আমাদের মন মগজে ও পাঠ্য পুস্তকের পৃষ্ঠায় আজও বিদ্যমান আছে । অথচ আমাদের দেশের শিক্ষাবিদরা সুক্ষ্ম দর্শিতার অভাবে ইংরেজদের চালা এই কূট চালটা হয় ধরতে পারে নি নতুবা ইংরেজি ভাষা , সাহিত্য ও সংস্কৃতি প্রেমে হেজে মজে গিয়ে আরবী বিদ্বেষ বা এ ভাষাকে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য জ্ঞান বশত: ইংরেজদের এই কথাটা তাদের ভালো লেগেছে ও মন:পুত হয়েছে বলেই অসার এ বাক্যটা ইসলাম , মুসলিম ও আরবী ভাষা বিদ্বেষী অজাত বিধর্মী ইংরেজদের আগামাথাহীন ইংরেজি ভাষার গ্র্যামার ও অনুবাদ বইতে এখনো বহাল রেখেছে । ইংরেজি ভাষা আসলেই বিদঘুটে ভাষা । এর বানান খুবই জটিল ও নিয়ম রীতি বর্জিত যে কারণে ইংরেজি ভাষা ভাষীরাও অনেক সময় ইংরেজি শব্দের বানান ভুল করে।
প্রাক্তন এক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর লিখিত এক পাতার চিঠিতে অনেক শব্দের বানান ভুল থাকার খবর প্রকাশিত হয়েছিল । আর আজ পর্যন্ত আমি বহু ইংরেজি শব্দের ( যেমন বর্জুয়া , কমিটি , ফ্রেন্ড ইত্যাদি ) বানান নিয়ে খুবই অস্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি ও সন্দিহান থাকি। বয়স বাড়ার কারণে ইংরেজি শব্দের বানানে ইদানীং ভুল হচ্ছে। ইংরেজি শব্দের বানান কঠিন হওয়ার কারণ হচ্ছে যে ইংরেজি শব্দ যেভাবে উচ্চারণ করা হয় অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ঠিক সেভাবে লেখা হয় না । উচ্চারণ ও লেখার মধ্যে বিস্তর ফারাক ও দুস্তর ব্যবধান বিদ্যমান । যেমন : বাজেট কিন্তু লেখা হচ্ছে budget অথচ লেখা ও বানান অনুযায়ী উচ্চারণ বুডগেট
হওয়া বাঞ্ছনীয় ছিল। মুন ( চাঁদ ) শব্দের বানান moon অথচ ভোর ( দরজা ) লেখা হচ্ছে
একই কায়দা ও রীতিতে : door , কিন্তু তা মুনের মতো ডুর উচ্চারিত হচ্ছে না বরং ডোর উচ্চারিত হচ্ছে । আর পুওর ( দরিদ্র , ফকীর ) শব্দটিও মুন ( moon ) ও ডোরের ( door ) বানানরীতি ও কায়দায় লেখা হচ্ছে : poor অথচ তা মুনের ( moon ) মত পুর অথবা ডোরের ( door ) মতো পোর উচ্চারিত হচ্ছে না। But ( বাট ) এর মতো Put ( পুট ) পাট উচ্চারিত হয় না ! এ কেমন রীতি ?! একটা অল্প বয়স্ক শিশু শিক্ষার্থীর জন্য ইংরেজি শব্দসমূহের সঠিক বানান আয়ত্ত করা খুবই কঠিন। আর এ কারণেই ছোট বেলায় ইংরেজি ক্লাস আমার কাছে খুবই বিরক্তিকর লাগত এবং ইংরেজি শিক্ষকের কাছে বানান সমস্যা নিয়ে বকা খেতে হত । বিদঘুটে ইংরেজি শব্দের বানান শেখার জন্য অনেক
কষ্টও করতে হয়েছে। আর ঐ ছোট বেলা থেকে ইংরেজির মতো আরবী পাঠ দান করা হলে আমরা আরবদের মতো আরবী বলতে পারতাম। বাংলাদেশ , ভারত ও পাকিস্তানে ক্লাস ওয়ান থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শেষ ধাপ পর্যন্ত ইংরেজির প্রচলন আছে । অথচ খুব কম সংখ্যক শিক্ষিত লোকেরা অনর্গল ইংরেজি বলতে পারে এবং এত বছর ইংরেজি ভাষা শেখার পরেও আরো ঢের কম সংখ্যক ব্যক্তি ( এ তিন দেশে ) শুদ্ধ ইংরেজি বুঝতে ও লিখতে পারে ! তাহলে এ থেকে কি বোধগম্য হয় না যে ইংরেজি ভাষাও জটিল ও কঠিন ভাষা ?!!!
ইংরেজি ভাষার টেন্স ( কাল ) আসলেই টেন্স ( অর্থাৎ উত্তেজনাপূর্ণ , যেমন : tense negotiation উত্তেজনাপূর্ণ আলোচনা ) , অ্যাপ্রোপ্রিয়েট প্রিপোজিশনের বহুল ব্যবহার এবং গ্র্যামারের আরো বহু দিক ও জটিল কায়দা কানুন ইংরেজি ভাষাকে কঠিন করেছে । তাই আরবীর ক্ষেত্রে যে কথাটা বলে বেড়ায় ইংরেজরা ঠিক তা ইংরেজির ক্ষেত্রেও ভালোভাবে প্রযোজ্য : English is a very difficult and hard language ( ইংরেজি অত্যন্ত কঠিন ভাষা ) । ইংরেজির বদলে যদি ক্লাস ওয়ান থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত আরবী শিক্ষার প্রচলন থাকত তাহলে আমাদের দেশের ছাত্র ছাত্রীদের কাছে আরবী বোধগম্য থাকত ও কঠিন লাগত না এবং তখন ঠিকই তাদের কাছে ইংরেজি ভাষা কঠিন লাগত ।